Header Ads

Header ADS

নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা ও বর্বর হত্যাযজ্ঞে নিন্দা ও শোক-বাসদ (মার্কসবাদী)


বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এক বিবৃতিতে গতকাল নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে জুমার নামাজ চলাকালে উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাত্যাভিমানী, অভিবাসীবিরোধী ও মুসলিমবিদ্বেষী সন্ত্রাসবাদীদের নির্মম গুলিবর্ষণে ৪৯ জন নিরপরাধ সাধারণ মানুষের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবির পাশাপাশি এই মর্মান্তিক ঘটনার উৎসমূল – সকল প্রকার উগ্র জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে আদর্শগতভাবে পরাস্ত করার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন শক্তিশালী করার আবেদন জানান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী শোষিত জনগণকে বিভক্ত করতে দুনিয়াজুড়ে জাতি-বর্ণ-ধর্মের নামে উগ্রবাদ উস্কে দিচ্ছে। বর্তমানে দেশে দেশে বিভিন্ন ধর্মের সাধারণ মানুষের ওপর যে উগ্র সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ চলছে তার উত্থান সূচনা সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কালে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে আদর্শগতভাবে কাবু করতে ধর্মীয় গোষ্ঠী, বিশেষত ইসলামী মৌলবাদীদের মদদ দেয় মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদীরা। আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সেখানকার মৌলবাদীদের অস্ত্র-অর্থ-প্রশিক্ষণ দেয় মার্কিন-পকিস্তান-সৌদি জোট। সেখান থেকেই জন্ম আল-কায়েদার, যারা পরবর্তীতে তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলা চালায়। এর প্রতিশোধ নেয়ার নাম করে মার্কিনীরা আফগানিস্তান দখল করে নেয়। একই অজুহাতে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সাদ্দাম সরকারকে উচ্ছেদ করতে সমৃদ্ধ ইরাককে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। মুসলিম অবমাননাবোধকে কাজে লাগিয়ে সেখানে জন্ম নেয় আইএস জঙ্গী গোষ্ঠী। পরবর্তীতে লিবিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি দেশে স্বাধীনচেতা শাসক পরিবর্তন করতে সেখানকার ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করে। তাদের উস্কানিতে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার শরণার্থী ইউরোপে আশ্রয় নেয়। পুঁজিবাদসৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটে দুর্দশাগ্রস্ত স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে অভিবাসীদের আগমনে তৈরি হওয়া আশংকাকে পুঁজি করে উগ্র জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন ডানপন্থী গোষ্ঠী ইউরোপে শক্তিশালী হয়েছে। আমেরিকায় ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেছেন অভিবাসীবিরোধী ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী শ্লোগান দিয়ে। অন্যদিকে তেলসহ সম্পদ দখলের লক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনকে ‘মুসলমানদের ওপর হামলা’ হিসেবে দেখিয়ে এর প্রতিশোধ নিতে আইএস ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে নৃশংস হামলা চালিয়েছে। তাদের সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড সেখানে ‘ইসলাম ভীতি’-র জন্ম দিয়েছে। এই সবকিছুই আবার মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর নামে যুদ্ধোন্মাদনা, অস্ত্র ব্যবসা ও দেশে দেশে হস্তক্ষেপ-এর অজুহাত তুলে দিচ্ছে। এই বৃহত্তর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ক্রাইস্টচার্চের ঘটনাকে দেখলে আমরা বুঝতে পারবো – কিভাবে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির মধ্যে ঘৃণার রাজনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। ফলে, উগ্র জাাতিদম্ভ-বর্ণবাদ-মৌলবাদবিরোধী আন্দোলনকে পুঁজিবাদী শোষণ ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনবিরোধী লড়াইয়ের সাথে যুক্ত করে সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামকে শক্তিশালী করার পথেই একে মোকাবেলা করা সম্ভব।

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.